মনস্তাত্ত্বিক কথাবার্তা
সার্ভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট অথবা প্রাকৃতিক নির্বাচনের নাম শুনেছেন তো তাইনা?
"প্রকৃতি যোগ্যদের চায়।
অযোগ্যরা ঝরে যাক, মরে যাক, পঁচে যাক! প্রকৃতিতে টিকে থাকার স্বার্থে যোগ্যদের লাগবেই."
ডাইনোসরের চেয়ে তেলাপোকার অভিযোজন ক্ষমতা বেশি ছিলো বলেই, প্রকৃতি যোগ্য হিসেবে চুজ করেছে তেলাপোকাকে।
চাকরির ইন্টার্ভিউ টেবিলের অপরপাশের মানুষদের নিকট আপনাকে যোগ্য মনে হলেই চাকুরিটা মিলবে।
এই প্রকৃতি বলেন বা সমাজের চাহিদা বলেন, "যোগ্য" গুণটাই একজন থেকে আরেকজনকে আলাদা করে দিচ্ছে সূচনালগ্নেই। সেই প্রকৃতির একটা অংশ হিসেবে প্রতিটি প্রাণিও তার সঙ্গী নির্বাচনে যোগ্যকেই প্রাধান্য দেয়।
নয়তো সেই প্রাণীটার পরবর্তী প্রজন্ম যে টিকবে না!
এখানে স্বার্থপর শব্দটা কেনো যেনো ইউজ করা যায়না। যখন প্রশ্নটা অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে আসে, তখন যোগ্যকেই চোখ বুঝে গ্রহণ করতে হয়।
এটাইতো সার্ভাইভাল অফ ফিটেস্ট তাইনা?
.
.
যদি তাই হয়, তবে আপনাকে এটাও বিশ্বাস করতে হবে যে, এই সমাজে একটা ছেলে বা মেয়ে কখনো রুপাঞ্জেলের গল্পের মত প্রেমে পরেনা। যাকে কখনো দেখেনি, জানেনি সে কেমন, কখনো শুনেনি তার ভিতরের খবর,
তার সাথে কখনো হুট করে প্রেম হতে পারেনা।
"Love at first sight" ওই রূপকথাতেই বাস করে, এই সমাজে না।
যেকারণে এই সমাজে একই টেরিটরির ভিতরেই সব প্রেমগুলো হচ্ছে। দুম করে হয়ে গেলো বা স্বর্গীয় সংকেতের মত করে হচ্ছেনা।
.
.
আপনি এখন প্রশ্ন করতেই পারেন, তাহলে প্রেম কি?
প্রেম হলো, নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির প্রতি তীব্র আকর্ষণের বহিঃপ্রকাশ। যাকে বাংলা শব্দে আদর করে ডাকি "প্রেম".[নোট করুনঃ আকর্ষণটি জৈবিক এবং মানসিক যেকোনো একটা হতে পারে, দুটোও হতে পারে]
তাহলে বুঝা গেলো, জৈবিক এবং মানসিক দুটো ক্রাইটেরিয়াতে ফেলে, প্রকৃতির উপাদান হিসেবে আমরা মানুষরাও আমাদের সঙ্গী চুজ করি। সবাই করে...আপনিও করেন, আমিও করি!
সেই প্রেমের দোহাই দিয়ে প্রেমিকাকে আমি চাইলে শুধু ভোগ করতেও পারি
- জৈবিকতার দিক থেকে।
চাইলে ভালোবাসতেও পারি
- মানসিক প্রশান্তির দিক থেকে।
চাইলে ভোগ, মানসিক প্রশান্তি দুটোই করতে পারি।
এতটুকু যদি বুঝে থাকেন, তবে এটা অন্তত ক্লিয়ার, প্রেম হতে রিজন লাগে।
সেই রিজনটা হলো চাহিদা, আর সিলেকশনটা হয় যোগ্যতায়।
আর এই জন্যই প্রেমের ক্ষেত্রে "কজ" থাকে "আফটার ইফেক্ট" থাকে।
এজন্যই আপনি এমন কারোও প্রেমে কখনোই পরবেন না, যাকে আপনি কখনো দেখেননাই।
দ্যট মিন, আমরা সংগী চুজ করি আশপাশ থেকে। ক্লিয়ার?
.
.
এতটুকু পড়ার পর আপনি আমাকে এখন তেড়ে এসে বলতেই পারেন,
- "প্রেম করেছি বলেই তার সাথে শুতে হবে? শোয়া ছাড়া প্রেম হয়না?"
চিল ব্রো, হবে। হবেনা কেনো?
কিন্তু যদি সত্যিই সে আপনার প্রেমিকা হয় তবে তার প্রতি আপনার চাহিদা কাজ করবেই। আফটার অল, আপনিতো আর প্রকৃতির উর্ধ্বে নন!
প্রেম মানে কি একসাথে থাকা নয়? একসাথে থাকলে কি আমি প্রকৃতির স্বার্থে আমার বংশধর তৈরি করবোনা? নাকি নিজেরা নিজেদের শুধু ভালোবাসবো। আর ভালোবেসে ভালোবেসে মরে যাবো?
পরে হোক বা আগে...একটা চাহিদার প্রশ্ন থাকে।
সেই চাহিদা আমি জৈবিক+মানসিক আঙ্গিকে উপস্থাপন করলাম।
যে ধার্মিক সে জৈবিক বা মানসিক চাহিদার একটাও চুজ করবেনা।
যে রক্ষণশীল, সে ভয়েই সেক্সের দিকে যাবেনা।
আর যে বেপরোয়া, তার তো কোনকিছুর পরোয়া নেই।
এখানে কে কোনটা চুজ করলো সেটা তার+তার পরিস্থিতির উপর ডিপেন্ড করে।
.
.
প্রেম কি গেলো,
কেনো প্রেম করতে মন চায় সেটাও গেলো,
প্রেম কিভাবে কিভাবে করা যায় সেটাও গেলো।
যদি তাই হয়...এবার প্রশ্ন উঠবে, আমরা কিভাবে সঙ্গী চুজ করি?
(১) একদম আমজনতার অংশ থেকে উত্তরটা খুবই সিম্পল।
- বাহ্যিকভাবে উৎকৃষ্ট
- যথেষ্ট কামনাসিক্ত এমন কেউ,
- সামাজিক ভ্যালু/চাহিদা আছে এমন কেউ.(যাকে পাশে রাখলে সবার চোখ টাটায়)
(২) পরের দলের মানুষগুলো একটু সিনসিয়ার। (যেহেতু তারা আমজনতার কাতারে নেই)
তারা বুঝে শুধু জৈবিক চাহিদা ফিলাপ করে বা সোজা বাংলায় দেহ দিয়ে কিছুই যায় আসেনা। দুইদিন পর বিরক্তি আসবেই। তাই এরা চুজ করে,
- মেন্টাল উৎকৃষ্টতা দেখে
- আচার আচরণ দেখে
আমি কখনো সানি বা মিয়া খলিফা বা সানাই আপুর মত কোনো সেক্সবোম্বকে চুজ করবোনা।
এদের আমার ভালো লাগেনা।
একইসাথে আমি কিন্তু আবার একেবারে পড়ালেখা করে উলটে ফেলা মেয়েকেও চুজ করবোনা।
এই দোটানার জায়গা থেকে আমাদের দলের মানুষেরা কিভাবে চুজ করে জানেন? তারা একটা তালিকা তৈরি করে ফেলে অবচেতন মনে। এবং এবার খুঁজতে থাকে,
- নিজেদের পছন্দের কাউকে,
- নিজেদের ক্যাপাবিলিটির উর্ধ্বের কাউকে,
- নিজেদের শখ মেটানোর মত কাউকে.
১) কেউ কেউ ফুল লিস্ট অনুযায়ী পেয়ে যায়, (সাক্সেস্ফুল কাপল)
২) কেউ কেউ নেগোশিয়েট করে নেয়, (স্টেবল কাপল)
৩) কেউ কেউ নেগোসিয়েশন করতে চেয়েও পারেনা ছুটে যায়. (মিথিলা-তাহসান)
ক্লিয়ার?
.
.
এবার লাস্ট প্রশ্ন উঠতে পারে, কয়টা প্রেম করবো? বা কতবার হতে পারে?
এই জায়গায় নিজ নিজ স্বত্বা দায়ী...
উপরে কিছু লিস্ট দিয়েছিলাম চুজিং করার, মন আছে?
- প্রেমিকা পেয়ে যাওয়ার পর হুট করে কেউ কেউ তাদের শখ, চাহিদার লিস্ট বড় করে ফেলে। ভাবে একহাতে চাঁদ আছে আরেক হাত খালি থাকবে কেনো? তারা একটা চুজ করে পেয়ে গেলে,
পরবর্তীতে এর চেয়ে বেটার কাউকে চুজ করতে চায়। এবং একটা ভয়েড লুপের মত চলতেই থাকে, যতদিন ধাক্কা না খায়। (ধাক্কার জায়গায় নাহয় অন্য একদিন আলোচনা হবে...)
- আবার কেউ কেউ যেটা পেয়েছে সেটা তার কল্পনার উর্ধ্বে ভেবে খুবই শান্তিতে বসবাস করতে থাকে। ডেইলি মুগ্ধ হয় এই ভেবে, "আমি পাইলাম, অবশেষে পাইলাম"
যাদের ছবি আমরা Meme বানিয়ে রাত হলে বয়ফ্রেন্ডকে পাঠিয়ে বলি, "আমারে তো কোনদিন এই পোলার মত ভালোবাস্লা না! হুহ!"
.
.
সব ব্যাখ্যা কাপলদের নিয়েই করলাম। সিংগেল প্রেমিকরা কই?
আসলে তারা তাদের লিস্ট অনুযায়ী কাউকে এখনো পায়নি।
পেলেও ধরে রাখতে পারে নি।
কেউ আবার পেলেও ভাবে, নেক্সটটা নিশ্চয়ই আরোও পার্ফেক্ট হবে.
খুঁজতে থাকে।
উপরে এতক্ষণ যা যা বললাম... এখানে প্রেমটাই উঠে এলো।
ভালোবাসাবাসি কই!?
এখানে ভালোবাসা ছিলোইনা কখনো?ভালোবাসা কাঁচের বয়ামে ভর্তি জোনাকি বা মানিব্যাগ ভর্তি টাকার মত সীমাবদ্ধ কোনো বস্তুই না।
ভালোবাসা এমন কোনো শর্তে আবদ্ধ নয় যে, একজন কে দিয়ে দিলাম ফুরিয়ে গেলো।
ভালোবাসা এমন কোনো স্যাক্রেড জিনিস না, যা কেউ চুরি করে নিয়ে গেলো।
ভালোবাসা খুবই সিম্পল, আমার নিজ পার্স্পেক্টিভ থেকে কারোও প্রতি মানবিক অনুভূতি এবং আবেগকেন্দ্রিক একটা অভিজ্ঞতা.
ভালোবাসায় কোনো বিনিময় নাই।
এটাই প্রেম থেকে ভালোবাসাকে আলাদা করে ফেলে।
আপনাকে যে পয়েন্টে আমি পাগলের মত ভালোবাসি, আপনাকে বিনিময়ে সেই পয়েন্টে রেস্পন্স করতে হবে এমন কোনো শর্ত ভালোবাসাতে কভু ছিলোইনা।
কেউ যদি দাবী করে, "নাহ তাকেও আমার মত করতে হবেই!"
তবে তারা হলো বর্তমানের "ক্রাশ সোসাইটির বাসিন্দা"। যাদের জন্যই আজ "ভালোবাসা" টার্মটা বদলে গেছে। মন থেকে এদের আমি ঘেন্না করি এবং এড়িয়ে চলি...
.
.
কি বলতে চেয়েছি ক্লিয়ার না?
আচ্ছা, আলোচনা থেকে "মানুষ" শব্দটা তুলে ফেলে দিয়ে কন্টিনিউ করি। আশা করি ক্লিয়ার হবে।
ধরুন, আমি আকাশকে, পুকুরকে ভালোবাসি। বিনিময়ে আকাশ, পুকুর আমাকে ভালোবাসবে, এটা ভাবা বোকামি।
আমি তার কোঁকড়া চুলকে ভালোবাসি। আমি তার অস্তিত্বকে ভালোবাসি। আমি তার স্মৃতিকে ভালোবাসি।
ভালোবাসতেই পারি...মানা নেই।
কিন্তু বিনিময়ে আমি তার কোকড়া চুল ভালোবাসি বলে, তাকেও আমার স্ট্রেইট চুলকে ভালোবাসতে হবে?
আমি তার স্মৃতিকে ভালোবাসি বলে, আমার স্মৃতিকেও তাকে ভালোবাসতে হবে?
এরকম শর্ত ভালোবাসাতে নেই...
ভালোবাসা "গিভ এন্ড টেইক" এর লজিকে আঁটকানো না। এটা শ্বাশ্বত একটা জিনিস। বিনিময় নেই এইখানে।
ভালোবাসাকে শর্তে না আঁটকিয়ে মুক্ত করেই দেখুন না! ভালোবেসেও তৃপ্তি পাবেন.
খুব কম মানুষই আছে যারা একে অপরকে একই পয়েন্টে ভালোবাসে।
আমি তার ঘন সোনালী চুল ভালোবাসি। এটা আমার ভালোবাসা।
বিনিময় চাইনা।
সে ও ঠিক তেমনি আমার গালের তিলকে ভালোবাসে। এটা তার ভালোবাসা।
বিনিময় খুঁজেনা।
এরকম উভয় দিক থেকে ভালোবাসা পাওয়া মানুষগুলো খুবই রেয়ার.
আপনি তার ভালোবাসা আশা করতেই পারেন। কিন্তু জোর করতে পারেন না।
জোর করে প্রেম হয়। ভোগ হয়।মেন্টাল প্রশান্তি হয়।
...ভালোবাসা হয় না।
এজন্যই হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ ভালোবাসাকে খুঁজছে, মনের মতন মানুষ খুঁজছে পায়না। না পেয়েই মরে যায়।
কিন্তু ভালোবাসা কমেনা।
... ... ... ...
ভালোবাসা শাশ্বত এক অনুভূতি।
ভালোবাসা আস্ত এক মহাকাশের মত। ভালোবেসে মানুষ উদার হয়, ত্যাগী হয়, সহনশীল হয়।
ভালোবাসা টার্মের ছোট্ট এক পোর্শন হলো প্রেম!
অথচ দেখুন না, ভালোবাসার আস্ত ইউনিভার্স ফেলে ক্ষুদ্র এক প্রেম নিয়েই চারিদিকে কত মাতামাতি। একটু দৃষ্টিসীমা বড় করে মুখ তুলে উপরে তাঁকাতে শিখুন। প্রেম করুন সহনীয় মাত্রায় তবে তার আগে ভালোবাসতে শিখুন।
আজ রাতে নিজের মনকে প্রশ্ন করবেন, এতদিন শুধু প্রেম করেই গেলেন?
নাকি মনের ভুলেও হয়ত এক দুইদিন অপরমানুষটিকে ভালোও বেসেছিলেন?
⟸⧫⟹
"Loop(লুপ)
পর্ব - ০২."
তারিখঃ ৮১০২/৯০/৫০.
পর্ব - ০২."


No comments